জাতীয়

রাজধানীর শক্তিশালী কম্পনের পেছনে জমে থাকা ভূ–শক্তির ভূমিকা

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশে খুব সম্প্রতি যে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, সাম্প্রতিক দশকে সেটিই ছিল সবচেয়ে তীব্র। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানই এ ধরনের ঝুঁকির প্রধান কারণ—উত্তরে ইন্ডিয়ান প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল এবং পূর্বদিকে বার্মিজ প্লেটের সঙ্গে ইন্ডিয়ান প্লেটের সংঘর্ষ অঞ্চল রয়েছে। প্লেটগুলো ক্রমাগত সরে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের ভূখণ্ডও ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে।

ভূতাত্ত্বিকদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে ভূ–শক্তি লকড অবস্থায় আটকে ছিল। সাম্প্রতিক কম্পন সেই শক্তি “আনলকিং”-এর ইঙ্গিত দিচ্ছে। ফলে নিকট ভবিষ্যতে একই ফাটললাইন ধরে আরও কম্পন হওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ঢাকার এত কাছাকাছি বড় মাত্রার ভূমিকম্প বহু বছর দেখা যায়নি। কয়েক প্রজন্ম এমন শক্তিশালী কম্পনের অভিজ্ঞতা পায়নি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বেশ কয়েকটি হালকা ও মাঝারি ভূমিকম্প হয়েছে, তবে সেগুলোর কোনোটিই ছিল না ক্ষয়ক্ষতির মতো শক্তিশালী।

ইতিহাস বলছে, গত ৩০০ বছরে বাংলাদেশ ও আশপাশে কয়েকটি বড় ভূমিকম্প ঘটেছে, যেগুলোর উৎপত্তিস্থল দেশের ভেতরে বা সীমানার কাছাকাছি।

১৭৬২ সালে টেকনাফ–মিয়ানমার পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কিলোমিটার বিস্তৃত ফাটললাইনে ঘটে ৮.৫ মাত্রার এক ভয়ংকর ভূমিকম্প। ওই কম্পনেই সেন্টমার্টিন দ্বীপ প্রায় তিন মিটার ওপরে উঠে আসে। সীতাকুণ্ডে ভূমিধসের মতো কাদা-বালুর উদ্গিরণ ঘটে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয় বিশাল ঢেউ, ধ্বংস হয় বহু ঘরবাড়ি, প্রাণহানি হয় প্রায় দুইশ মানুষের।

১৮৬৯ সালের ভূমিকম্প, যা ‘কাচার আর্থকোয়েক’ নামে পরিচিত, ছিল ৭.৫ মাত্রার। উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট সংলগ্ন জৈন্তা পাহাড়ের উত্তরে শিলচড় এলাকায়। শিলচড়, নওগাঁও, ইম্ফলসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিধ্বস্ত হয়, তবে প্রাণহানির নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না।

১৮৮৫ সালের ১৪ জুলাই মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় ঘটে ৭ মাত্রার আরও একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। কম্পন অনুভূত হয় সিকিম, মণিপুর, মিয়ানমারসহ বৃহত্তর অঞ্চলে।

আরও পড়ুনঃ ব্রাক্ষণবাড়ীয়ায় ঔষধ বিক্রিতে অনিয়ম প্রতিরোধে ফার্মেসীতে মোবাইল কোর্টের অভিযান।

এ ছাড়া ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক’ নামে পরিচিত ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে দেড় হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে সিলেট অঞ্চলে প্রাণহানি ছিল পাঁচ শতাধিক। ওই কম্পনে সুরমা নদীসহ বিভিন্ন এলাকায় বড় ধরনের ফাটল দেখা দেয় এবং নদীর প্রবাহপথেও পরিবর্তন আসে।

তথ্য সূত্র

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।