বিনোদন

ডিজিটাল যুগে অন্ধকার জগৎ: বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট তৈরির নতুন হুমকি

Spread the love

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যাপকতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন শুধু তথ্য বিনিময়ের মাধ্যম নয়, বরং এক জটিল ডিজিটাল জগতের দ্বারও খুলে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীকে আন্তর্জাতিক প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে— যা দেশের আইন অনুযায়ী অপরাধ হলেও তারা প্রকাশ্যে নিজেদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রবণতা শুধু সামাজিক অবক্ষয়ই নয়, বরং দেশের তরুণ সমাজকে আর্থিক প্রলোভনের মাধ্যমে একটি অন্ধকার ও অপরাধপ্রবণ ডিজিটাল নেটওয়ার্কে টেনে নিচ্ছে।

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু ডিজিটাল বিপথগামিতা

তদন্তে দেখা গেছে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনেকেই নিজেদের কনটেন্ট প্রচার করছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে অজান্তেই অন্যদের যুক্ত করছেন এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে।
তাদের অনেকেই দাবি করছেন, “এটা শুধু অনলাইন আয়ের উপায়।” কিন্তু বাস্তবে তারা জড়াচ্ছেন এমন এক অপরাধে, যার জন্য বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে (পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২)।

আরও পড়ুন: ঘরের এই ছোট ভুলেই অর্ধেক কমে যাচ্ছে আপনার ওয়াইফাই স্পিড! জানুন সহজ সমাধান

আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ছে নেটওয়ার্ক

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ছদ্মনাম ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট তৈরি ও প্রচারের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। কিছু ব্যক্তি বিদেশি ওয়েবসাইটের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের অন্তর্ভুক্ত করছেন তথাকথিত “মডেল প্রোগ্রামে”।
এই নেটওয়ার্কের মূল উদ্দেশ্য — নতুন কনটেন্ট তৈরি, দর্শক বাড়ানো, এবং প্রতিটি ভিডিও ভিউয়ের বিনিময়ে অর্থ আয় করা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চক্রগুলো সাধারণত টেলিগ্রাম বা ডার্ক ওয়েবে সক্রিয় থাকে, যেখানে কনটেন্ট লেনদেন হয় এনক্রিপ্টেড মাধ্যমে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য তাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।

অর্থলোভে তরুণ সমাজের বিপদসীমায় পতন

বেশ কিছু কিশোর-কিশোরী শুধুমাত্র দ্রুত অর্থ উপার্জনের আশায় এই অবৈধ শিল্পে যুক্ত হচ্ছে। তারা বুঝতে পারছে না, একবার এই পথে গেলে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “অশ্লীল কনটেন্টে জড়ালে তা শুধু আইনি অপরাধই নয়, বরং মানসিকভাবে ধ্বংসাত্মক। এটি পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইল, মানহানি বা সাইবার বুলিংয়ের কারণ হতে পারে।”

আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার ইউনিট ও বিটিআরসি নিয়মিতভাবে পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট অপসারণে কাজ করছে। ২০২৪ সালেই বিটিআরসি ৬০ হাজারের বেশি ওয়েবসাইট ও লিংক ব্লক করেছে।
তবে, প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন ও VPN ব্যবহারের কারণে অনেক কনটেন্ট আবারও অনলাইনে ফিরে আসে।

একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “অনলাইন পর্নোগ্রাফি দমন শুধু আইন প্রয়োগ নয়, এটি সামাজিক সচেতনতার বিষয়ও। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তরুণদের মধ্যেও এ বিষয়ে আলোচনা জরুরি।”

সমাজে প্রভাব ও সচেতনতার প্রয়োজন

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের অনলাইন কার্যক্রম তরুণদের নৈতিক মূল্যবোধকে নষ্ট করছে এবং অপরাধ প্রবণতা বাড়াচ্ছে।
একই সঙ্গে, তারা মনে করেন, স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ডিজিটাল লিটারেসি ও সাইবার নৈতিকতা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত, যাতে তরুণরা নিজেরাই সচেতন হতে পারে।

উপসংহার: প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই সমাধান

ইন্টারনেট মানুষের জীবনকে সহজ করেছে, কিন্তু ভুল ব্যবহারে এটি সমাজের জন্য হুমকিতে পরিণত হতে পারে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, পরিবার ও সমাজ— সবার সম্মিলিত উদ্যোগেই সম্ভব এই অন্ধকার জগত থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করা।
যদি সময়মতো সচেতনতা না আসে, তবে বাংলাদেশও বৈশ্বিক পর্নোগ্রাফি শিল্পের অংশ হয়ে উঠবে— যা আমাদের সামাজিক ও নৈতিক কাঠামোকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

টেক সম্পর্কিত আপডেট জানতে এই ফেসবুক পেজটি ফলো করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *