জাতীয়

কফিনবন্দি হয়ে দেশে ফিরলেন হাদি, আজ অন্তিম বিদায়

সংবাদটি শেয়ার করুন

কফিনবন্দি হয়ে দেশে ফিরলেন হাদি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ কফিনবন্দি হয়ে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছায় তাঁর মরদেহ। জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিন গ্রহণ করেন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। আজ শনিবার রাষ্ট্রীয় শোকের মধ্য দিয়ে তাঁকে অন্তিম বিদায় জানানো হবে।

ইনকিলাব মঞ্চ জানিয়েছে, আজ দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে তাঁকে দাফন করা হবে। জানাজা ও দাফন ঘিরে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।


হত্যাকাণ্ড ও চিকিৎসার ধারাবাহিকতা

নির্বাচনী জনসংযোগের সময় ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদিকে চলন্ত রিকশায় গুলি করে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান এই হামলার সঙ্গে জড়িত। ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি ভারতে পালিয়ে যান বলে গণমাধ্যমে জানা যায়।

গুরুতর আহত অবস্থায় হাদিকে ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। তবে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১০টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।


শাহবাগসহ দেশজুড়ে বিক্ষোভ

হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই রাজধানীর শাহবাগ উত্তাল হয়ে ওঠে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচি শুক্রবার দিনভর অব্যাহত ছিল। জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ‘আধিপত্যবিরোধী’ সমাবেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম ঘোষণা দেন, শাহবাগের নাম হবে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’। তিনি বলেন, হাদির হত্যার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সমাবেশে বক্তারা হাদিকে অহিংস ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেন।

শাহবাগ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।


রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য

সমাবেশে বক্তব্য দেন জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি মুনতাছির আহমাদ, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা। তারা সবাই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, হাদি গণতান্ত্রিক ও অহিংস রাজনীতির পক্ষে ছিলেন এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েই তিনি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন।


ছাত্রদল ও বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ

হাদির হত্যার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ছাত্রদল। সংগঠনের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই হত্যাকাণ্ড একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।

একই দিন জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিক্ষোভ হয়। সেখানে খুনিদের গ্রেপ্তার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।


জন্মস্থানে শোকের মাতম

ঝালকাঠির নলছিটিতে হাদির জন্মস্থানে নেমে আসে শোকের ছায়া। তাঁর বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। স্থানীয় বাসিন্দারা হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।


আন্তর্জাতিক মহলের শোক

শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস, ব্রিটিশ হাইকমিশন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল। বিবৃতিতে তারা হাদির পরিবার, বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সহিংসতা পরিহার ও ন্যায়বিচারের আহ্বান জানিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ বিরলে বিএসএফ কর্তৃক আটককৃত বাংলাদেশী নাগরিকদের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিজিবি এর নিকট হস্তান্তর

উপসংহার

কফিনবন্দি হয়ে দেশে ফিরলেন হাদি—এই বাক্যটি এখন কেবল একটি সংবাদ শিরোনাম নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক বেদনাদায়ক অধ্যায়। তাঁর হত্যার বিচার এবং নিরাপদ, গণতান্ত্রিক রাজনীতি নিশ্চিত করার দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা আগামী দিনগুলোতে আরও বিস্তৃত হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তথ্য সূত্র

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *