জীবনযাপন

চোখের ইমপ্লান্টে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া: এক নতুন মিরাকল

Spread the love

ভাবুন, যিনি বহু বছর ধরে কিছুই দেখতে পাননি, হঠাৎ তিনি আবার আলোর ঝলকানি, প্রিয় বইয়ের অক্ষর কিংবা চারপাশের মুখগুলো চিনতে পারছেন! এই অবিশ্বাস্য পরিবর্তন এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে চোখের ইমপ্লান্টে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া প্রযুক্তির মাধ্যমে। লন্ডনের মুরফিল্ডস আই হসপিটালে দৃষ্টিহীন রোগীদের চোখে অত্যাধুনিক মাইক্রোচিপ ইমপ্লান্ট সফলভাবে বসানো হয়েছে, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে যুগান্তকারী এক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রোগীদের জীবনে আলো ফিরছে

এই প্রযুক্তির সাহায্যে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া ৭০ বছর বয়সী শিলা আরভিন আবার বই পড়তে ও ক্রসওয়ার্ড সমাধান করতে পারছেন। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না—এত বছর পর আমি আবার দেখতে পাচ্ছি। এটি জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার।”
উইল্টশায়ারের বাসিন্দা শিলা প্রায় ৩০ বছর আগে দৃষ্টি হারিয়েছিলেন। ইমপ্লান্ট বসানোর পর তার প্রতিক্রিয়া ছিল উচ্ছ্বসিত—“আমি খুবই আনন্দিত যে প্রযুক্তি এতদূর এগিয়েছে, আমি এর অংশ হতে পেরেছি।”

আরও পড়ুনঃ রাজশাহীতে বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুরে উত্তেজনা

কীভাবে কাজ করে এই চোখের ইমপ্লান্ট?

ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক বায়োটেক কোম্পানি সায়েন্স করপোরেশন উদ্ভাবন করেছে এই “প্রিমা ইমপ্লান্ট” নামক মাইক্রোচিপ। এটি মূলত ড্রাই এজ-রিলেটেড মাকুলার ডিজেনারেশন (AMD) বা জিওগ্রাফিক অ্যাট্রোফি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য তৈরি। এই রোগে রেটিনার কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে দৃষ্টি ঝাপসা বা বিকৃত হয়ে যায়।

ইমপ্লান্ট স্থাপনের ধাপ:

  • মাইক্রোচিপটি মানুষের চুলের মতো পাতলা ও মাত্র ২ মিলিমিটার আয়তনের।
  • এটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রেটিনার নিচে স্থাপন করা হয়।
  • রোগীরা এরপর একটি বিশেষ চশমা পরেন, যেখানে থাকা ক্যামেরা ইনফ্রারেড রশ্মি ব্যবহার করে চিত্র মাইক্রোচিপে পাঠায়।
  • সেই তথ্য মস্তিষ্কে পৌঁছে মস্তিষ্ক তা প্রক্রিয়া করে দৃষ্টিশক্তির আকারে ফিরিয়ে দেয়।

চিকিৎসকদের ভাষায় প্রযুক্তির সাফল্য

মুরফিল্ডস আই হসপিটালের কনসালট্যান্ট সার্জন ড. মাহী মুকিত বলেন, “এটি প্রথম ইমপ্লান্ট যা কার্যকরভাবে রোগীদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছে। তারা এখন পড়তে, লিখতে এবং আশপাশ চেনার মতো কাজ করতে পারছেন—এটি সত্যিই এক বিশাল অগ্রগতি।”

নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, ইউরোপের পাঁচটি দেশে ৩৮ জন রোগীর ওপর এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়। এর মধ্যে ৩২ জনের চোখে ইমপ্লান্ট বসানো হয়, এবং ২৭ জন সফলভাবে পড়তে সক্ষম হন। এক বছর পর দেখা যায়, তাদের দৃষ্টিশক্তি আরও উন্নত হয়েছে।

ড. মুকিত আশা প্রকাশ করেন, “আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) এই প্রযুক্তি সাধারণ রোগীদের জন্যও ব্যবহার শুরু করবে।”

তথ্য সূত্রঃ আরটিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *