ঝাল আসলে স্বাদ নয়, একধরনের ব্যথার অনুভূতি!
আমরা যখন কোনো ঝাল খাবার খাই—যেমন মরিচ, সস বা কাঁচা লঙ্কা—তখন জিভে বা মুখে যে “জ্বালাভাব” অনুভূত হয়, সেটিকে সাধারণত অনেকেই “ঝালের স্বাদ” মনে করেন। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে এটি আসলে একটি ব্যথার অনুভূতি (Pain Sensation), কোনো স্বাদ (Taste) নয়।
স্বাদের প্রকৃত সংজ্ঞা
আমাদের জিভে অসংখ্য ক্ষুদ্র গঠন থাকে, যেগুলোকে বলা হয় স্বাদকোরক বা টেস্ট বাডস (Taste Buds)। এই টেস্ট বাডস মূলত পাঁচটি মৌলিক স্বাদ শনাক্ত করতে পারে—
👉 মিষ্টি (Sweet)
👉 টক (Sour)
👉 নোনতা (Salty)
👉 তেতো (Bitter)
👉 উমামি (Umami)
এই পাঁচটি স্বাদই প্রকৃত অর্থে “টেস্ট” হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু “ঝাল” বা “Spicy” তার মধ্যে পড়ে না।
ঝালের আসল রহস্য
ঝাল খাবারের মধ্যে থাকে একটি বিশেষ রাসায়নিক যৌগ—ক্যাপসাইসিন (Capsaicin)। এটি মরিচের প্রধান উপাদান, যা আমাদের ব্যথা ও তাপমাত্রা অনুভবকারী স্নায়ুগ্রাহক (Pain and Heat Receptors)-এর ওপর প্রভাব ফেলে।
এই রিসেপ্টরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো TRPV1 রিসেপ্টর (Transient Receptor Potential Vanilloid 1)। যখন ক্যাপসাইসিন এই রিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন এটি মস্তিষ্কে এমন একটি সংকেত পাঠায় যা “তাপ” বা “ব্যথা” হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়।
ফলে মস্তিষ্ক মনে করে আমাদের জিভ বা মুখমণ্ডল যেন আগুনের সংস্পর্শে এসেছে, যদিও বাস্তবে কোনো ক্ষতি হয় না। এই বিভ্রান্তিকর সংকেতের কারণেই আমরা “জ্বালা” বা “পোড়া” অনুভব করি।
আরও পড়ুনঃ ডিজিটাল যুগে অন্ধকার জগৎ: বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট তৈরির নতুন হুমকি
কেন কেউ ঝাল খেতে পছন্দ করে?
আশ্চর্যের বিষয়, অনেকেই ঝাল খাওয়ার পরও এই অনুভূতি উপভোগ করেন। কারণ, মস্তিষ্ক থেকে তখন “এন্ডোরফিন (Endorphin)” নামক সুখ হরমোন নিঃসৃত হয়, যা সাময়িকভাবে আনন্দ ও তৃপ্তি দেয়। তাই ঝাল খাওয়ার ব্যথা অনেকের কাছে আনন্দেরও উৎস হয়ে ওঠে।
উপসংহার
সব মিলিয়ে বলা যায়—
“ঝাল” কোনো স্বাদ নয়, বরং এটি মস্তিষ্কের ব্যথা ও তাপমাত্রা সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়া। আমাদের মস্তিষ্ককে “ভুল সংকেত” পাঠিয়েই ক্যাপসাইসিন ঝালের অনুভূতি তৈরি করে। তাই পরেরবার যখন লঙ্কা খেয়ে মুখে আগুন ধরে যাবে, মনে রাখবেন—এটি আসলে আগুন নয়, বরং মস্তিষ্কের এক চমৎকার বিভ্রম!
ফেসবুকে আমরাhttps://www.facebook.com/sottosongbad247/

