জাতীয়

ঈদগাঁওয়ে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র: অস্ত্র দিয়ে অটোচালককে ফাঁসানোর অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

সংবাদটি শেয়ার করুন

ডেক্সি রিপোর্টঃ

🔴 ঈদগাঁওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ

অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হলো অটোচালককে—কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি বাস্তব জীবনের যে কোনো থ্রিলার সিনেমাকেও হার মানায়। স্থানীয় বখাটে যুবকদের বিরুদ্ধে ইভটিজিং মামলার জেরে এক নিরীহ অটোচালককে পরিকল্পিতভাবে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। আশ্চর্যের বিষয়, পুরো ঘটনাটি ধরা পড়েছে পার্শ্ববর্তী একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে।

📍 কোথায় ও কখন ঘটেছে ঘটনা

ঘটনাটি ঘটে চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর সকালে ঈদগাঁও বাসস্ট্যান্ডের আনু মিয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়—সাধারণ যাত্রীর ছদ্মবেশে কয়েকজন পুলিশ সদস্য একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করেন।

🕵️‍♂️ পরিকল্পিত ফাঁদের বিস্তারিত চিত্র

সকাল ৭টার কিছু পর ঈদগড়-বাইশারী সড়কের মাথা থেকে অটোচালক জাফর আলম–এর গাড়িতে ওঠেন এক পুলিশ সদস্য। কিছুদূর যাওয়ার পর পানি কেনার অজুহাতে গাড়ি থামিয়ে তিনি নিজের পকেটের টাকা দিয়ে চালককে দোকানে পাঠান।

এই সুযোগেই যাত্রীবেশী ওই ব্যক্তি নিজের ব্যাগ থেকে একটি অস্ত্র বের করে অটোর পেছনের অংশে রেখে দ্রুত নেমে যান। এরপর তাকে অল্প দূরে গিয়ে অন্য পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।

এক মিনিটের মধ্যেই আগে থেকে ওত পেতে থাকা আরেকটি অটো কয়েক হাত দূরে এসে দাঁড়ায়। জাফর আলম পানি নিয়ে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করে আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য দৌড়ে এসে তাকে আটক করেন।

📸 অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে ফটোশুট

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আটক করার পর জাফরের হাতে জোর করে অস্ত্র ধরিয়ে ছবি তোলা হয়। এ সময় তাকে গালাগাল করা এবং অস্ত্র হাতে নিতে বাধ্য করার দৃশ্যও স্পষ্ট।

👮 অভিযানে যাদের নাম উঠে এসেছে

এই নিন্দনীয় ‘অপারেশন’ পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে ঈদগাঁও থানার বিতর্কিত এসআই বদিউল আলম, ওসির গানম্যান কনস্টেবল তানভীর এবং কনস্টেবল মনির–এর বিরুদ্ধে।

দীর্ঘদিন চেষ্টা করে সংগৃহীত সিসিটিভি ফুটেজে পুরো ঘটনাটি স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। অথচ সেই সময় থেকেই অটোচালক জাফর আলম কারাগারে রয়েছেন।

😢 ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ

ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, জাফর আলম ঈদগাঁও ইসলামপুর ইউনিয়নের ভিলেজারপাড়ার ‘ফুদনির ছোঁয়া’ এলাকায় বসবাস করেন। ভাড়াচালিত অটো চালিয়েই তার সংসার চলে।

জাফরের স্ত্রী রাবেয়া অভিযোগ করে বলেন, “আমার স্বামী কোনোদিন অস্ত্র ধরেনি। দুই লাখ টাকা নিয়ে পুলিশ তাকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়েছে।”

তার মেয়ে লীজা মনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানায়, স্থানীয় বখাটে শাহীন ও রাসেলের ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে মামলা করায় এই প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে। স্কুলে যাওয়া বন্ধ, রাতে ভয়ে অন্য বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার মতো পরিস্থিতির কথাও তুলে ধরে সে।

🏘️ স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা বলছেন, প্রভাবশালী যুবকদের বিরুদ্ধে কথা বললেই সাধারণ মানুষকে বিপদে পড়তে হয়। পুলিশের একটি অংশ তাদের পক্ষে কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

🗣️ পুলিশের বক্তব্য

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই বদিউল আলম কথা বলতে রাজি হননি। তবে সংবাদটি বন্ধ করতে তদবিরের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলক বিশ্বাস বলেন, “আপনাদের দেওয়া সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমি নিশ্চিত—তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এ ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আরও পড়ুনঃ ১৫ বিজিবি’র চলমান গোয়েন্দা তথ্য ভিত্তিক অপারেশন: ভারতীয় জিরা ও কাপড় এবং মাদকদ্রব্য জব্দ

🔍 অতীতেও বিতর্কিত ছিলেন এসআই বদিউল

উল্লেখ্য, এর আগেও টেকনাফসহ বিভিন্ন থানায় কর্মরত অবস্থায় এসআই বদিউল আলমের বিরুদ্ধে খুনের আসামি ছেড়ে দেওয়া, ইয়াবা কারবারিদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া এবং শিশুদের অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। তবে প্রমাণের অভাবে তিনি বারবার পার পেয়ে যান।

এবার সরাসরি সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আসায় তার পার পাওয়ার সুযোগ নেই বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য সূত্র

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *