সারাদেশ

বিরল উপজেলায় ব্যবসায়ী খুনের রহস্য উন্মেচন॥ হত্যা ঘটনায় জড়িত ২ জন আটক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সেলিম রেজা, (বিরল উপজেলা প্রতিনিধি):

বিরল উপজেলায় মোটরসাইকেল বিক্রির টাকা নিজ হেফাজতে রাখাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ব্যবসায়ী খুনের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে হত্যার সাথে জড়িত ২ জনকে আটক করে তারা। হত্যার সাথে জড়িত অপর ১ জন আসামী পলাতক রয়েছে।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক দিনাজপুরে ঘটে যাওয়া কয়েকটি অপরাধের প্রকৃত রহস্য দ্রুততম সময়ে উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতারে দিনাজপুর জেলা পুলিশ সফলতার পরিচয় দিয়েছে। সফল অভিযানগুলি ধারাবাহিকভাবে লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরায় জনমনে সচেতনতা ও অপরাধ ভীতি হ্রাস পেয়েছে। সম্প্রতি উদঘাটিত ঘটনাটি ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারের মাধ্যমে জনমনে নিরাপত্তাবোধ বৃদ্ধি পাবে বলে দিনাজপুর জেলা পুলিশ মনে করে।

গত ০৮ ফেব্রুয়ারি- ২০২৫ শনিবার দুপুর অনুমান ১২.৩০ টায় বিরল থানাধীন ৩নং ধামইর ইউনিয়নের অন্তর্গত পিপল্যা গ্রামস্থ ঢেড়াপাটিয়া বাজারে ”জাকির ফুড প্রোডাক্টস কারখানা” মালিক জাকির হোসেন (৫৫) এর বন্ধু সাজু ডিসিস্ট জাকির হোসেন এর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর বন্ধ পান। তিনি তখন ডিসিস্ট এর মেয়ে আলমা রাইসা প্রভাকে জানালে তার মেয়েও পিতার মোবাইল নম্বর বন্ধ পেয়ে  চিন্তিত হয়ে পড়েন।

পরে মেয়ে আলমা রাইসা প্রভা গত ০৮ ফেব্রুয়ারি-২০২৫ শনিবার দুপুর অনুমান ০১.৩০ টায় উকিল মোঃ এনায়েত হোসেন চৌধুরীকে তার পিতাকে মোবাইল ফোনে না পাওয়ার বিষয়টি অবগত করলে তিনি জাকির হোসেন কে খোঁজাখুজি করতে থাকেন। খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে ঐ দিন বিকাল অনুমান ০৫.৪৫ টায় বিরল থানাধীন ৩নং ধামইর ইউনিয়নের অন্তর্গত পিপল্যা গ্রামস্থ ঢেড়াপাটিয়া বাজারে জাকির হোসেন এর জাকির ফুড প্রোডাক্টস কারখানায় গিয়ে মেইন গেইট বন্ধ পান। তখন ফ্যাক্টরির পাশের ফার্নিচারের দোকানের ভিতর দিয়ে কারখানায় প্রবেশ করে গেইট দিয়ে উকি মেরে একজন ব্যাক্তিকে রক্তাক্ত অবস্থায় কারখানার মেঝেতে উপুর অবস্থায় দেখতে পেয়ে চিৎকার দিলে স্থানীয় লোকজনসহ অনেকে সেখানে হাজির হন।

জাকির ফুড প্রোডাক্টস কারখানায় লাশ পাওয়ার সংবাদ পেয়ে জাকির হোসেন এর পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে হাজির হন এবং উক্ত সংবাদ পাওয়া মাত্রই বিরল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্য প্রযুক্তি ও সোর্স নিয়োগ করে আসামী সনাক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে।

মৃত জকির হোসেন দিনাজপুর সদর উপজেলার চাউলিয়াপট্টি এলাকার মৃত আবুল কাশেম এর ছেলে। অতঃপর সেখানে উপস্থিত জাকির হোসেন এর ভাগ্নে মোঃ নাহিদ আলী জাকির হোসেন এর লাশ সনাক্ত করে এবং মৃত দেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে মৃত দেহ ময়না তদন্তের জন্য দিনাজপুর মর্গে প্রেরন করেন। জাকির হোসেন এর পরিবারের ধারনা মতে ইং ০৭ ফেব্রুয়ারি-২০২৫ শুক্রবার রাত অনুমান ৯ টা হতে ০৮ ফেব্রুয়ারি-২০২৫ শনিবার বিকাল অনুমান ০৫.৪৫ টার মধ্যে যে কোন সময় অজ্ঞাতনামা খুনি বা খুনিরা জাকির হোসেন কে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কপালের বাম পার্শ্বে ভারী কোন বস্তু দ্বারা আঘাত করে রক্তাক্ত গুরুত্বর জখম এবং গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

পরবর্তীতে জাকির হোসেন এর মেয়ে আলমা রাইসা প্রভা ঢাকা হতে এসে বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে বিরল থানার মামলা নং-০৯/৪৮, তারিখ ০৯ ফেব্রুয়ারি- ২০২৫ খ্রিঃ, ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড, ১৮৬০ মামলা রুজু করা হয়।

মামলা রুজুর পরপরই জেলার পুলিশ সুপার মোঃ মারুফাত হুসাইন এর দিক নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মোঃ আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল, দিনাজপুর) মোঃ আঃ হালিম এবং বিরল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুস ছবুর এর নেতৃত্বে এসআই (নিঃ)/মোঃ সোহেল রানা এর সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও সোর্স নিয়োগ করে আসামী সনাক্ত ও মামলার মূল রহস্য উদঘাটনের কাজ শুরু করার নিমিত্তে অভিযান শুরু করে।

ঘটনার পর হতে ঘটনার সাথে জড়িত আসামীরা খুবই চতুর ও পলাতক থাকায় আসামী গ্রেফতারে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ইং ১৮ নভেম্বর-২০২৫ তারিখ রাত অনুমান ২২.৪৫ ঘটিকায় বিরল থানাধীন ঢেড়াপাটিয়া বাজারের জনৈক আনিছুরের চায়ের দোকান হতে আসামী আঃ রশিদ ওরফে পাল্টু ওরফে পাল্লুকে গ্রেফতার করলে সে জানায় যে, ভিকটিম জাকির হোসেন তার পূর্ব পরিচিত এবং মাদক সেবনের সূত্র ধরে জাকিরের সাথে পাল্লু, রবিন এবং ইয়াসিন এর মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরী হয়। পরে পাল্লুর দেয়া তথ্য মতে ১৯ নভেম্বর-২০২৫ রাত ০৩.৪৫ টায় ইয়াসিন কে তার নিজ বসতবাড়ী হতে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত পাল্লু ও ইয়াসিনের দেয়া তথ্য মতে মোঃ আব্দুর রশিদ পাল্লু ওরফে পালানু পেশায় ভ্যানচালক। ইয়াসিন কৃষিকাজ করে এবং রবিন পেশায় কাঠুরে এবং ভ্যানচালক। পাল্লু, রবিন এবং ইয়াসিন একই সঙ্গে মাদক সেবনের খাতিরে জাকির এর খামারে যাতায়াত থাকায় ঘটনার ১৫ দিন আগে জাকির হোসেনের মোটরসাইকেল বিক্রি করার খবর পায় এবং ঘটনার ২/ ৩ দিন আগে বিক্রেতা কর্তৃক টাকা প্রদানের সময় দেখে ফেলে। টাকা নিতে দেখার পর হতে রবিন, পাল্লু ও ইয়াসিন উক্ত টাকা যে কোন উপায়ে হস্তগত করার পরিকল্পনা করে। অতঃপর ঘটনার দিন ০৮ ফেব্রুয়ারি-২০২৫ দুপুর বেলা অনুমানিক ২ টার দিকে রবিন, ইয়াসিন ও পাল্লুর ভ্যানে করে জাকিরের কারখানায় আসে। পরে তারা তিনজন জাকিরের কারখানায় প্রবেশ করে জাকিরের ঘরে ঢুকে। জাকির কে শুয়ে থাকতে দেখে। সেসময় মশারির উপরে ছোট হাতব্যাগে রাখা মোটর সাইকেল বিক্রির টাকা নেয়ার চেষ্টা করলে জাকির বাঁধা দিলে পাল্লু, রবিন ও ইয়াসিন পরস্পরের পরিকল্পনা মোতাবেক রবিন ও ইয়াসিন জাকিরের মাথায় ইট দিয়ে বাড়ি দেয়। আসামীদের আঘাতের ফলে জাকির হোসেন দাড়ানোর চেষ্টা করে ঘটনাস্থলে মাটিতে পড়ে যায় এবং মৃত্যুবরন করে। পরবর্তীতে আসামী ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুভূত ভূমিকম্প

উক্ত ঘটনা সংক্রান্তে আসামী পাল্লু এবং ইয়াসিন কে গ্রেফতার করতঃ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরন করা হয়েছে। আসামী আঃ রশিদ ওরফে পাল্লু ওরফে পালানু আদালতে ঘটনার বিষয়ে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আসামী ইয়াছিন এর বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন প্রেরন করা হয়েছে। আসামী রবিন বর্তমানে পলাতক রয়েছে। তবে তাকে গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খুনের কাজে ব্যবহৃত ইটটি ঘটনাস্থল হতে উদ্ধার করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *