বিশ্ব

‘টাকার অভাবে’ নির্বাচন করতে পারছে না ইউক্রেন, দাবি জেলেনস্কির উপদেষ্টার

সংবাদটি শেয়ার করুন

ডেক্স নিউজঃ

ইউক্রেন বর্তমানে গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে দেশটির গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর। টাকার অভাবে নির্বাচন করতে পারছে না ইউক্রেন—এমনই দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মিখাইল পোডোলিয়াক। তাঁর মতে, বাজেট ঘাটতি ও চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন আয়োজন করা ইউক্রেনের পক্ষে এই মুহূর্তে বাস্তবসম্মত নয়।

রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির বরাতে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তিনি এখনও নির্বাচন ঘোষণা করেননি। সামরিক আইন কার্যকর থাকার বিষয়টি সামনে এনে নির্বাচন স্থগিত রাখার যুক্তি দেখানো হচ্ছে। তবে এই সিদ্ধান্ত ঘিরে দেশটির অভ্যন্তরে যেমন বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নানা প্রশ্ন উঠছে।


🟨 টাকার অভাবে নির্বাচন নিয়ে সংকটে ইউক্রেন

একটি সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইল পোডোলিয়াক স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিপুল অর্থ প্রয়োজন, যা বর্তমানে ইউক্রেনের বাজেটে নেই। তাঁর ভাষায়, “বাস্তবতা হলো, বাজেট ঘাটতির কারণে আমরা এই মুহূর্তে নির্বাচন বহন করতে পারছি না। আমাদের অর্থায়নের অগ্রাধিকার ভিন্ন খাতে।”

তিনি আরও জানান, ইউক্রেনের বর্তমান প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত সামরিকায়ন কার্যক্রম জোরদার করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ব্যয় বৃদ্ধি করা। যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা দিতে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে, যা নির্বাচনের মতো ব্যয়বহুল প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দিচ্ছে।


🟨 রাশিয়ার অভিযোগ ও জেলেনস্কির বৈধতা প্রশ্ন

এদিকে রাশিয়া প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে দাবি করেছে, তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ইউক্রেনের আইনগত ক্ষমতা দেশটির পার্লামেন্টের হাতে থাকা উচিত। মস্কোর মতে, জেলেনস্কির এই বিতর্কিত অবস্থান শান্তি আলোচনার পথে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাশিয়ার এমন বক্তব্যকে কিয়েভ সরকার রাজনৈতিক চাপ হিসেবে দেখলেও বাস্তবতা হলো, টাকার অভাবে নির্বাচন করতে পারছে না ইউক্রেন—এই স্বীকারোক্তি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।


🟨 যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও পশ্চিমা মিত্রদের ভূমিকা

নির্বাচন আয়োজন নিয়ে ইউক্রেনের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে ইউক্রেনকে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন। একসময় জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরাচারী’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

এই চাপের জবাবে জেলেনস্কি বলেন, তিনি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, তবে পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে শক্ত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রয়োজন। তাঁর মতে, যুদ্ধকালীন অবস্থায় নির্বাচন আয়োজন করলে দেশটির নিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে।


🟨 নির্বাচন ব্যয় পর্যালোচনার প্রস্তাব

যদিও জেলেনস্কির উপদেষ্টা নির্বাচন আয়োজনের ব্যয় নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তবুও ইউক্রেনের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন এবং পার্লামেন্টের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব করে দেখতে পারে বলে জানান তিনি। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি অনুকূল হলে নির্বাচন আয়োজনের পথ খোলা রাখতে চায় সরকার।


🟨 জরিপে জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা নিয়ে ধাক্কা

নির্বাচন বিতর্কের মধ্যেই সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন হলে জেলেনস্কি তার সাবেক শীর্ষ সেনা কমান্ডার ও সম্ভাব্য প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভ্যালেরি জালুঝনির কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হতে পারেন। এই তথ্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ নাসিরনগর প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি গঠিত। সভাপতি আছমত আলী সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মল হক সবুজ

🔚 উপসংহার

সব মিলিয়ে বলা যায়, যুদ্ধ, অর্থনৈতিক সংকট ও আন্তর্জাতিক চাপ—এই তিনের চাপে ইউক্রেন এখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। টাকার অভাবে নির্বাচন করতে পারছে না ইউক্রেন—এই দাবি শুধু একটি মন্তব্য নয়, বরং দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিফলন।

তথ্য সূত্র

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।